সিরাজগঞ্জে নদী ভাঙন: দুই উপজেলার মানুষ আতঙ্কে
ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। হঠাৎ ভাঙনের শব্দেই এখন ঘুম ভাঙছে এ দুটি উপজেলার মানুষের।
গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধের গুরুত্বপূর্ণ ২১০ মিটার বাঁধ যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এ দুটি উপজেলার মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এ দুটি উপজেলার মানুষ বাঁধভাঙা আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড চৌহালী ও কাজিপুর ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে (জিওটেক্স) বালির বস্তা ঢালছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী-কাজিপুরের খুদবান্দী যমুনার পশ্চিম তীর সংরক্ষণ বাঁধের বাহুকা টুটুলের মোড় এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।
সরেজমিনে জানা যায়, গত প্রায় দুই মাসে কাজিপুরের শুভগাছাসহ ও চৌহালী উপজেলায় প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি, আবাদী জমি, স্কুল, মাদরাসা, কবরস্থান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে আরো অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার।
ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা ঘর ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা বাড়ি আঙিনায় গাছপালা পর্যন্ত কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বাঁধটি ভেঙে শুভগাছা, বাহুকা, বেড়ের চর, চিলগাছা রতনগান্ধি খুকশিয়া, গজারিয়া, সড়াতৈলসহ প্রায় ১০ গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৪০ মিটার এলাকাজুড়ে গত বুধবার ধস দেখা দেয়। গত প্রায় দু`মাস ধরে এ বাঁধটির বেশ কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে গত ২৭ এপ্রিল থেকে ওই এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং শুরু করে পাউবো।
কিন্তু বুধবার দুপুর থেকে হঠাৎ করেই টুটুলের মোড় এলাকায় বাঁধে ধস শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ৪০ মিটার এলাকা ধসে যায়। বাঁধটি ধসে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতংক শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২ মে চৌহালীতে যমুনা নদী তীর সংরক্ষণে নির্মণাধীন বাঁধের খগেনের ঘাট এলাকায় ধস দেখা দিয়েছে। ধসের বিস্তৃতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ মিটারে। তবে বালি বোঝাই জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালী ও টাঙ্গাইলের নাগরপুর ৭ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ বাধের নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর শুরু হয়। গত মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে নদীর জাজুরিয়া খগেনের ঘাট অংশে ধস শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭০ মিটার ধসে যায়। আকষ্মিক এ ধসের ফলে তীরবর্তী মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভাঙনের মুখে পড়েছে চৌহালী ও কাজিপুরসহ জেলার মানুষ। এসব পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহযোগিতা কিংবা খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি।
ভাঙন কবলিত আব্দুল আলিম ও ফিরোজ আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ বাড়ি ঘর হারিয়ে বাঁধের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়েছি। এখানেও নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১ মাস ধরে নদী ভাঙছে।
বুধবার দুপুরে বাঁধ ধসে পড়লো নদী গর্ভে। বাড়ি ঘর সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাওয়া যায়নি। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে নগদ অর্থ ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি।
রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খোকন বলেন, এখানে গত কয়েকদিন যাবত নদী কিছু কিছু করে ভাঙছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বুধবার আকস্মিক ভাবে বাঁধ ধসে পড়েছে। একারণে এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সার্বিক কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, ভাঙনরোধ করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ভাঙন কবলিত মানুষের জন্য আমি এখনও পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাই নাই। তবে আশা করি বরাদ্দ পাব। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার যা যা করণীয় তাই তাই করবো।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পজিশন এসে গেছে। তখন আর ভাঙন থাকবে না। আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে দেখবেন এখানে ব্লাক বানাচ্ছে। কিন্তু এই যে সময়টুকু (ক্রাইসিস টাইম) পানি উন্নয়ন বোর্ড চেষ্টা করছে ভাঙন ঠেকাতে। আমরা জিও বস্তা দিয়ে চেষ্টা করছি ভাঙন ঠেকানোর জন্য। আরো চেষ্টা করা হচ্ছে রিংক ড্রাইভ করার জন্য।
প্রতিক্ষণ/এডি/রন